বৃষ্টি আদর
-পায়েল সাহু
নন্দিতা সুন্দরী, তন্বী, গুণবতী নৃত্যশিল্পী তাই তার গুণমুগ্ধ ভক্তের অভাব হয় না। ফেসবুকের পেজে অজস্র ভালোলাগা মন্তব্যে ভরে যায় নন্দিতার প্রতিটি ছবি, অবশ্য সঙ্গে ইনবক্সও।
নন্দিতা যে এসব উপভোগ করে না এমন নয়, ভালোই লাগে তার, তবে মন ভরে না। কোথাও যেন কিছু খামতি থেকেই যায়। এইটুকু বুঝতে পারে কেউ তাকে নয় তার শরীরটাকে চায়।
সেই জন্য আজকাল কথা বলা কমিয়ে দিয়েছে সে।
শুধু আকাশ ভাঙা বৃষ্টি এলেই নিজেকে স্নান করিয়ে চোখের নোনা জলের ধারায় একাকীত্ব যাপনের উৎসব করে নন্দিতা।
কিছুদিন হলো নন্দিতার মায়ের জন্য একজন ফিজিওথেরাপিষ্ট আসছেন বাড়িতে, ছেলেটির নাম সৌরভ, তার থেকে বয়সে কিছুটা ছোটো কিন্তু তার চোখের উজ্জ্বল দৃষ্টি, কথা বলার ভঙ্গিমা, দৃপ্ত চেহারা আকর্ষণ করে নন্দিতাকে। নানা অছিলায় নন্দিতা আসে সৌরভের সঙ্গে কথা বলতে, কেমন যেন মনে হয় সৌরভ বসে শুধু কথা বলে যাক, আর নন্দিতা মোহগ্রস্তের মতো শুনে যাক।
ক্রমশ দুজনের বন্ধুত্ব বাড়তে সময় নেয় না, whatsapp এ সারাদিন একে অন্যের ইনবক্সে নিছক বন্ধুত্বপূর্ণ কথা চালাচালি করে চলে। ভীষণ আপন, ভরসা যোগ্য মনে হয় সৌরভকে।
এতো দিনে সৌরভ এইটুকু জেনে গেছে যে ভীষণ একাকীত্ব বোধ করা নন্দিতার বৃষ্টিতে ভেজা ভীষণ পছন্দের। তাই গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি যখন আজ সকালেও থামলো না, সৌরভের ছোট্ট একটা msg ঢুকলো নন্দিতার ইনবক্সে “যাবে নাকি নদীর ধারে এই বর্ষায় নতুন করে নিজেকে খুঁজে নিতে? সঙ্গী হিসেবে যদি আমাকে চাও তাহলে বলবো আমি তৃপ্ত হতে চাই এই রুপোলি বর্ষণ ধারায় নিজেকে তোমার মধ্যে খুঁজে পেতে।”
ছোট্ট মিষ্টি মেসেজটা পড়ে উথাল পাথাল ঢেউয়ের দোলায় ভাসতে ভাসতে নন্দিতা যে কখন পৌঁছে গেছে নদীর ধারে, সে নিজেও জানেনা। কিন্তু সৌরভ কই? অচেনা জায়গায় একাকী পরিবেশে অর্ধসিক্ত নন্দিতার যেন মোহভঙ্গ হয়। এতদিন ধরে করে আসা নিজের বোকামির জন্য নিজেকেই নিজে দোষারোপ করতে থাকে বারবার। চোখের আগলটা যে কখন খুলে গেছে বুঝতেই পারেনি নন্দিতা। প্রচন্ড বৃষ্টির ধোঁয়াশার মধ্যে গঙ্গার জোয়ারের জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় পায়ে পায়ে এগোতে থাকে জলের কাছাকাছি।
হঠাৎ করেই কোমরের কাছে একটা ভেজা হাতের স্পর্শে আমূল কেঁপে ওঠে নন্দিতা। “এগিয়ে যাচ্ছো আমাকে পেছনে ফেলেই? আমি যে তোমার সঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছি, পূরণ করবে না তুমি?” সৌরভের গলা কানে যেতেই যেন ধ্যানভঙ্গ হয় নন্দিতার। সৌরভের বুকের কাছে সরে এসে ছাতাটা দিয়ে আড়াল করে নন্দিতা বলে ওঠে “এমন ভাবেই আগলে রেখো আমাকে, যেন তোমার আমার মধ্যে এক ফোঁটা বৃষ্টির মতো ভুল বোঝাবুঝির জায়গা না থাকে।”
আদরে সোহাগে ভরিয়ে দেওয়ার নিরবিচ্ছিন্ন মুহূর্ত অনবরত সৃষ্টি হতে থাকে সৌরভের চওড়া বুকের নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে।
Khub sundar
অনেক ধন্যবাদ